Wednesday, June 15, 2016

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬। দেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দলটির সম্মেলন কেবল দলটির জন্যই নয়, দেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে দলটি ক্ষমতায় থেকে দেশ, জাতি ও জনগণের উন্নতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্বকারী গণরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দলটির জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘ প্রায় ৬৭ বছরের ইতিহাসে আমাদের জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমন কোনো সুকীর্তি ও অর্জন নেই, যাতে আওয়ামী লীগ দলটির নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল না। জনগণের ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা ও কর্তব্যের রক্ষক, ধারক-বাহক এবং স্বার্থক রূপকার ও পরিচালক হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এর আগে দুই নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী আর পরে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ অগণিত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, মেধা-শ্রম, রক্ত-ঘাম, স্বপ্ন-কর্মে দলটি আমাদের জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নানা বাধা-বিপত্তি ও চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বর্তমান দিনগুলোতে দলটি বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় থেকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিতান্ত অন্ধ ও হীন উদ্দেশ্যপূর্ণ ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল ও দল ছাড়া দেশবাসী সকলেই স্বীকার করবেন যে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে বাংলাদেশেরই ইতিহাস। উপমহাদেশ তো বটেই এবং এমন কি বিশ্বেও এমন ঐতিহ্যমণ্ডিত গণ-আস্থাসম্পন্ন ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দল বিরল; যে দল হত্যা-খুন, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক আইনের বিধিনিষেধ, পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশে ব্যবহারীদের অপপ্রচার এবং দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে জনগণের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুদীর্ঘ এই সময়কালে প্রতিক্রিয়া ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার সবৈব ও সর্বাত্মক হীন প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। কিন্তু বাংলার মাটি ও মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবেই টিকে আছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা এবং ৩ নভেম্বর তার সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর পরাজিত শক্তি অপপ্রচার-মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দশা হবে ঠিক পাকিস্তানের মুসলিম লীগের মতো। মুসলিম লীগের যেমন মৃত্যু ঘটেছিল, তেমনি আওয়ামী লীগেরও দিন শেষ হবে। বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বানাতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত জাতীয় শত্রুরা, তাই পাকিস্তান ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি ওরা। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, আজ জনগণের সমর্থন, আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণœ রেখে দেশপ্রেমের গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে ক্ষমতায় থেকে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই দলের সম্মেলনকে ঘিরে দেশবাসী বিপুলভাবে আলোড়িত হয়ে উঠছে।
দুই
বিগত ৬৭ বছরে দলটির ১৯টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দলটির সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়ার গঠনতান্ত্রিক বিধান ছিল। প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৫০ সালে মুদ্রিত গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা থেকে নির্বাচিত ১ হাজার ৪৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত গঠনতন্ত্রে দুই বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়। এখন গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়েছে। ইতিহাসের গভীরে গিয়ে প্রাণরস আহরণের জন্য ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-সদস্য-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও জনগণকে আজ স্মরণে আনতে হবে অতীতে কোন পরিবেশে কবে কোথায় কোন কর্তব্য সাধনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সম্মেলনগুলো জাতি ও জনগণের জীবনে কোন তাৎপর্য বয়ে এনেছে। এ বিষয়টি অনুধাবনের জন্য বিগত সময়ের ১৯টি কাউন্সিল ও ২টি বিশেষ কাউন্সিল তথা সম্মেলনের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো।
* প্রতিষ্ঠা সম্মেলন : ২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯; ঢাকা, রোজ গার্ডেন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
* দ্বিতীয় সম্মেলন : ১৪-১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* তৃতীয় সম্মেলন : ২১-২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* চতুর্থ সম্মেলন : ৭-৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭; কাগমারি, টাঙ্গাইল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* বিশেষ সম্মেলন : ১৩-১৪ জুন, ১৯৫৭; ঢাকা, শাবিস্তান সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে সভাপতি পদত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ।
* পঞ্চম সম্মেলন : ৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* সপ্তম সম্মেলন : ১৯ আগস্ট, ১৯৬৭; ঢাকা, পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগ অফিস। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* অষ্টম সম্মেলন : ৪ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* নবম সম্মেলন : ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* দশম সম্মেলন : ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকা। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১১তম সম্মেলন : ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
* ১২তম সম্মেলন : ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
বিশেষ সম্মেলন : ২৩-২৪ নভেম্বর; ১৯৭৮; ঢাকা।
* ১৩তম সম্মেলন : ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
* ১৪তম সম্মেলন : ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
* ১৫তম সম্মেলন : ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১৬তম সম্মেলন : ৬-৭ মে, ১৯৯৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* বিশেষ কাউন্সিল : ২৩ জুন, ২০০০; ঢাকা।
* ১৭তম সম্মেলন : ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল।
* ১৮তম সম্মেলন : ২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
* ১৯তম সম্মেলন : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।*
(* বিভিন্ন পুস্তক ও দলিল অনুসরণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারিখ বা সম্মেলন কত দিনের হয়েছে প্রভৃতি নানাভাবে লেখা রয়েছে, ঢাকায় কোথায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে লেখকের জানার সীমাবদ্ধতার কারণে তা এখানে তুলে ধরা সম্ভব হয় নি। এই তালিকা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।)
উল্লিখিত তালিকা লক্ষ্য করলেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনেক সময়েই সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে পারে নি। এর কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে সামরিক শাসনে রাজনীতি বন্ধ থাকা, দমনপীড়ন, আন্দোলন- সংগ্রাম, হত্যা-ক্যুয়ের মাধ্যমে দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রচেষ্টা প্রভৃতি সব অনিবার্য কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে নি। তবে যখনই আওয়ামী লীগ সময় ও সুযোগ পেয়েছে, তখনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রয়োজনে বিশেষ কাউন্সিল করেছে। সম্মেলন যথাসময়ে করার বিষয়ে অন্য দলগুলোর তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
তিন
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনও এটা বিস্মৃত হয় নি যে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা, মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে যোগ্যতমদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রভৃতি করার জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠা সম্মেলন থেকে ১৯তম সম্মেলনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রতিটি সম্মেলনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সংগঠনের জন্য আর সেই সাথে দেশের জন্য অবদান রেখেছে। প্রতিটি সম্মেলনকেই মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা চলে। আর এমন একটি সম্মেলনও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দেশ ও জনগণের আর সেই সাথে দলের প্রয়োজনে সম্মেলন কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয় নি। জন্মলগ্নের অঙ্গীকার অনুযায়ী লক্ষ্যের প্রতি অবিচল ও স্থির থেকে কৌশলে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী ও নমনীয় থাকার ঐতিহ্য বরাবরই আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছে।
দলটির সম্মেলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা বিশেষ মুহূর্তে প্রয়োগ করতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ভুল করে নি। এ কারণেই জনগণ যেমন দলটির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পেরেছে, তেমনি দলও কখনও জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারায় নি। এই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের শক্তির প্রধানতম উৎস। জনগণের সাথে এই সংযোগ থাকার কারণেই দেখা যাবে যে, তৃণমূলে জনগণের নেতারাই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সদস্য কর্মী ও নেতা। সম্মেলনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত কখনও তৃণমূলের সদস্য কর্মী ও নেতাদের চিন্তা-চেতনার বিপরীতধর্মী না হওয়ায় চরম দুর্দিনেও এরাই আওয়ামী লীগকে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শ্রম-মেধা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে।
সম্মেলনগুলো উল্লিখিত ভূমিকা রেখেছে বলেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ও উজ্জীবিত থাকতে সক্ষম হয়েছে। উল্লিখিত কথাগুলো যে ইতিহাসের কষ্টিপাথরে সত্য এবং প্রতিটি সম্মেলন থেকে যে কিছু শেখার রয়েছে, তা বিবেচনার জন্য বিগত সম্মেলনগুলোর তাৎপর্য ও অর্জনের দিকে সংশ্লিষ্ট সবার ফিরে তাকাতে হবে। অর্জনের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই সংগ্রাম অব্যাহত রেখে নতুন নতুন অর্জন ছিনিয়ে আনতে হবে। নতুন তাৎপর্য অর্জনের জন্যই অতীতের তাৎপর্যকে করতে হবে মহিমান্বিত, নিতে হবে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। বর্তমানের চলার পথকে কণ্টকমুক্ত ও আলোকিত করার জন্যই অতীতের দিকে ফিরে তাকানো ভিন্ন বিকল্প নেই।
চার
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২২ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, দিক-নির্দেশহারা। পাকিস্তানি শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, পূর্ব বাংলা-বিরোধী কার্যকলাপ, গণতন্ত্র ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে অনিহা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্ভিক্ষাবস্থা প্রভৃতি নতুন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নসাধকে ধূলিস্যাৎ করে চলছিল। কোনো বিরোধী কথা বললেই ‘শির কুচাল দেঙ্গে’ কথাটা উচ্চারিত হতো। কেবল হুমকি নয়, শুরু হয়ে গিয়েছিল দমন-পীড়নও। তখনকার ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে জেলে ছিলেন। এই দুঃসহ অবস্থায় গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দমন-পীড়ন প্রতিহত করার জন্য মুসলিম লীগ বিরোধী একটি বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা জনগণ প্রত্যাশা করছিল।
এই অবস্থায় প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি নিয়ে সম্মেলনের ভেতর দিয়ে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই দল গঠন অতুল ও প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রতিষ্ঠার তারিখ দুটো ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য মহেন্দ্রক্ষণ। পাকিস্তানি মতাদর্শ দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এই মানচিত্রের জনগণের আবহমান থেকে চলে আসা গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চলমান ধারা থেকে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল, এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে শুরু হয় ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই ধারার সাথে সংযোগ প্রতিষ্ঠার আয়োজন। এই আয়োজন যে স্বার্থক ও সফল হয়েছিল, ইতিহাসই তা স্বাক্ষর রেখেছে। সকালই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করে রোজ গার্ডেনের সম্মেলন প্রকৃত অর্থেই বাংলার মাটিতে গোলাপ ফুটিয়ে চলছে।
দ্বিতীয় সম্মেলন ছিল বাহান্নর ভাষা আন্দালনের পটভূমিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন সামনে রেখে। তরুণ শেখ মুজিব তখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ৩০০ কাউন্সিলর নিয়ে ১৪-১৬ নভেম্বর ১৯৫৩ অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ২১-দফা কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত হয়। এই দুই সিদ্ধান্ত যে কতটা তৎপর্যম-িত ও যুগান্ত সৃষ্টিকারী ছিল, তা ইতিহাস স্বাক্ষর রেখেছে। তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫, পাকিস্তানি শাসক-শোষক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও ৯২(ক) ধারা জারি, যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়া, পূর্ব বাংলার আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বিরোধী দলে অবস্থান নেওয়ার প্রেক্ষাপটে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ পর্যুদস্ত অবস্থার মধ্যে ছিল। এই সম্মেলনের অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেওয়া। চতুর্থ সম্মেলন ৮৯৬ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ৭-৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭, টাঙ্গাইলের কাগমারিতে। তখন কেন্দ্রে ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। চরম দলাদলির মধ্যে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, দলের কোনো নেতা একই সাথে দলের কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপদে থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা প্রমাণ করে শেখ মুজিব মন্ত্রিপদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ওই সম্মেলনের চার মাস পরে ১৩-১৪ জুন ১৯৫৭, অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে দলের ভাঙন অনিবার্য হয়। মওলানা ভাসানী গঠন করেন ন্যাপ। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যুক্ত নির্বাচন প্রথার পক্ষে দৃঢ় থেকে সংবিধান প্রণয়ন ও নির্বাচনের পক্ষে জোর অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। পাকিস্তানের ক্ষমতায় থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ এই সম্মেলনকে তাৎপর্যময় করে রেখেছে। ৬-৮ মার্চ ১৯৬৪, অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলন ছিল সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন ও প্রত্যাহার, আইয়ুব মোনায়েমের দমন-পীড়নের শাসন, রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দল গঠন না করে এনডিএফে থাকার অভিজ্ঞতা, দলীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু প্রভৃতি সামনে নিয়ে। ১ হাজার কাউন্সিলর নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রবীণ নেতারা এনডিএফে থেকে কাজ করতে মরিয়া থাকলেও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা।
এই সম্মেলন থেকেই শুরু হয় শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার পথ-পরিক্রমা। ষষ্ঠ সম্মেলন ১ হাজার ৪৪৩ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে ১৮-২০ মার্চ ১৯৬৬ অনুষ্ঠিত হয় পাক-ভারত যুদ্ধ ও শেখ মুজিবের ৬-দফা ঘোষণার পটভূমিতে। কাউন্সিল ৬-দফা গ্রহণ করবে না এটাই ছিল জোর প্রচার। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলরা তা মিথ্যা প্রমাণ করে বাঁচার দাবি ৬-দফার পক্ষে সক্রিয় সমর্থন ঘোষণা করে। এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং তার সহযোগীদের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন। এই মাইলফলক অতিক্রমের পর আওয়ামী লীগের আর পিছুটান ছিল না।
সপ্তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ আগস্ট ১৯৬৭, আগরতলা মামলার মধ্যে পিডিএমপন্থিদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে। নেতৃবৃন্দের জেলে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার এড়িয়ে ১৮০ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিল। বিরোধিতার মধ্যেও এই সম্মেলনে ৬-দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাৎপর্যম-িত। অষ্টম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৪ জুন ১৯৭০। গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, আইয়ুবের পতন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ী এক পরিবেশের মধ্যে। ১ হাজার ১৩৮ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সম্মেলন ৬-দফা ও ১১-দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সত্তরের নির্বাচনে যাওয়ার ভিত সৃষ্টি করে তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে আছে। এটাই ছিল পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের শেষ সম্মেলন।
পাঁচ
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের স্বাধীন দেশে প্রথম সম্মেলন হলো নবম সম্মেলন। যুদ্ধবিধস্ত দেশের পুনর্গঠন, পুনর্বাসন, নতুনভাবে সব গড়ে তোলাসহ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে ৭-৮ এপ্রিল ১৯৭২, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে সংবিধান রচনার ভিত সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের দশম সম্মেলন হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ সম্মেলন। ১৮-২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে নীতি-নির্ধারণী সুদীর্ঘ ভাষণের পর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত প্রসারিত করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড় এটা জীবনে বারবার প্রমাণ করে আমাদের জাতির পিতা এই সম্মেলনকে মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অনুপস্থিতি, হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি, প্রত্যক্ষ সামরিক কর্তার শাসন, দল ভাঙাভাঙিসহ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ৩-৪ এপ্রিল ১৯৭৭, অনুষ্ঠিত হয় একাদশ সম্মেলন। পাকিস্তানের মুসলিম লীগের দশা হবে আওয়ামী লীগের মতো অর্থাৎ, দলটি হবে ছত্রখান ও নিশ্চিহ্ন এই প্রচারের মধ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় ঐক্য রক্ষা করা, পদ দখলের চক্রান্ত প্রতিহত করা এবং তৃণমূলে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে এই সম্মেলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ভেতর দিয়ে এই সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
দ্বাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৩-৫ মার্চ ১৯৭৮। পরোক্ষ সামরিক কর্তা জিয়ার দুঃসহ অন্ধকারাচ্ছন্ন শাসনের মধ্যে। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের শূন্যতার অভাব অনুভূত এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকলেও তৃণমূলে দল গুছিয়ে উঠতে এই সম্মেলন সাহায্য করে। মাত্র আট মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় জিয়ার তথাকথিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর এবং সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলন ১১-দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশের অস্থিতিশীল ও নাজুক অবস্থায় উল্লিখিত সম্মেলন ৩টি ছিল মার্কটাইম করার অর্থে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ছয়
১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১, অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ সম্মেলন আওয়ামী লীগ আর সেই সাথে দেশের ইতিহাসের এক বিশেষ মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রবাসে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত করে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা ভোট ও ভাতের রাজনীতিতে সূচিত হয় নতুন এক অধ্যায়। এই সম্মেলনের পর সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হলে আবারও দেশে এক অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কবলে পড়ে। আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে ব্যাকেট দিয়ে দল গঠনের চক্রান্ত শুরু হয়। এত কিছুর মধ্যেও দলটি ভাঙনের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে চলতে থাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ১৫ দলের আন্দোলন। ফলে চতুর্দশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হয়। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে দল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে থাকে।
এই অবস্থায় ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ১৯৮৭, অনুষ্ঠিত হয় চতুর্দশ সম্মেলন। এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে আরও গুছিয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়। ’৯১-এর সূক্ষ্ম কারচুপির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশ আবারও সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসে। এ অবস্থায় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২, অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ সম্মেলন। বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালার আলোকে ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন করা ছিল এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। আওয়ামী লীগ আবার প্রমাণ করে লক্ষ্য ও নীতির প্রতি অবিচল থেকে সঠিক সময়ে কৌশলে পরিবর্তিত হওয়া দলটির জন্য স্বাভাবিক বিষয়। সম্মেলনের পর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গণসংগ্রাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণ-আন্দোলন প্রভৃতির কারণে ষষ্ঠদশ সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয় না।
গণসংগ্রামে বিজয়ের প্রেক্ষাপটে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে ৬ ও ৭ মে ১৯৯৭, ষষ্ঠদশ সম্মেলনে মিলিত হয়। সুদীর্ঘ বছর পর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন দেশকে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যাভিমুখী পথে ঘুরে দাঁড়াতে যথার্থ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলে নির্বাচন সামনে থাকায় সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও বিশেষ সম্মেলন ২৩ জুন ২০০০ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন গণতন্ত্র উন্নয়ন ও মুুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে প্রভূত ভূমিকা পালন করে। এই সম্মেলনের পর ২০০১ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত হতে বাধ্য করা হলে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা ও নিশ্চিহ্ন করতে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়।
এই পরিস্থিতি রুখে দাঁড়ানোর ভেতর দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর ২০০২, সপ্তদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দলকে উজ্জীবিত রাখতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন চরমে পৌঁছে। এদিকে বিএনপি-জামাত জোট ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও কুক্ষিগত করতে চাইলে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। ফলে যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে আসে এক-এগারোর জরুরি আইনের সরকার। রাজনীতি থাকে নিষিদ্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে প্রথমে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হয়। পরে নেত্রীকে কাটাতে হয় বন্দী জীবন। কিন্তু এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে।
জনগণের ভোটে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ ২৪ জুলাই ২০০৯, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অষ্টাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠান করে। এই সম্মেলন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক বিশেষ। এই সম্মেলনে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন ঘোষণাপত্র গ্রহণ এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় এই সম্মেলনকে তাৎপর্যম-িত করে তোলে। সরকার পরিচালনায় সাফল্য এবং দেশ ও জনগণের অব্যাহত উন্নতি ও অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ঊনবিংশতম সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল ও সংবিধান বহির্ভূত পথে ঠেলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি-জামাত জোটের যুদ্ধংদেহী কার্যকলাপ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও মূলত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনের কারণে সম্মেলন পিছানো হয়। এখন আওয়ামী লীগ ২০তম সম্মেলনের দোরগোড়ায়।
সাত
এমন একসময়ে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন হতে যাচ্ছে, যখন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দলটি সাত বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার আজ দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত। দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তির সৃষ্ট বাধা-বিপত্তি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারার মধ্যেও দেশবাসী আজ জাতির পিতা ও লক্ষ লক্ষ শহীদের স্বপ্নসাধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশকে জন্মলগ্নের লক্ষাভিমুখী পরিচালনা করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। সরকারের সৃজনশীল প্রয়াস ও কর্মোদ্যোগের সাথে দেশবাসীর ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা ও কর্মউদ্দীপনা একই খাতে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন এক বাংলাদেশ ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
এই বাংলাদেশ শহীদের রক্তস্নাত স্বপ্নের সোনার বাংলা। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। একবিংশ শতকের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ হয়ে ওঠার দাবি নিয়েই দেশের গৌবরম-িত জনগণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের সম্মেলন যেমন যথাযথ রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মপন্থা গ্রহণে ভুল করে নি; তেমনি এবারেও সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই এগিয়ে যাবে। জনগণের সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর করতে দলের সব নেতা-কর্মী-সদস্যদের সচেতন সক্রিয় ও উদ্যোগী করা; শ্রম ও মেধা, ত্যাগ ও কার্যকারিতা এবং নবীন ও প্রবীণদের সম্মিলন ঘটিয়ে কেন্দ্রে যথাযথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রভৃতি অতীতে, যা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো করে গণচেতনা ও গণসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে; এবারেও তা করবে বলেই জনগণ দৃঢ়ভাবে মনে করে।
এটা তো ঠিক যে, আওয়ামী লীগ মানুষের চেতনা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ ও অঙ্গীকার করার ফলেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছে। সময় শেষে দলকেই আবার জনগণের কাছে জনতার রায়ের জন্য যেতে হবে। সরকার নয়, দলকেই দাঁড়াতে হবে জনগণের সামনে। মানুষ সরকারকে নয় ভোট দেবে দলকে, দলীয় প্রার্থীকে। এই দিক বিবেচনায় যতই আগামী নির্বাচন সামনে আসছে, ততই দলের আর সেই সাথে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মী-সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে যাচ্ছে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপযোগী সংগঠন হিসেবে এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চেতনা শাণিত করে নব উদ্যম নিয়ে বের হয়ে আসবে এবং অতীত সম্মেলনগুলোর ঐতিহ্যের ধারাকে অগ্রসর করে নেবে এটাই বর্তমানে জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
মূল প্রবন্ধঃ শেখর দত্ত, উত্তরন নিউজ

শেখ হাসিনা একজন ক্যারিশম্যাটিক মিসরের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনা একজন ক্যারিশম্যাটিক 

মিসরের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারিশম্যাটিক লিডার আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁর প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও আস্থা রয়েছে।
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে মিসরের রাষ্ট্রদূত একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসংশা করে বলেন, এই উন্নতির জন্যই বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ান টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের জন্যই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে এশিয়ান টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং মিসর বাংলাদেশের এই অর্জন থেকে শিক্ষা লাভ করতে চায়।
বাংলাদেশের ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মিসরের রাষ্ট্রদূত একে বিস্ময়কর সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শান্তিপ্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও তিনি অভিভূত।
মাহমুদ ইজ্জত বাংলাদেশের মানুষের সহনশীলতার ও ভূয়শী প্রশংসা করেন।
সম্প্রতি মিশরের একটি এয়ার ক্রাফট ভূমধ্য সাগরে বিধ্বস্থ হবার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশরের প্রেসিডেন্টকে শোকবার্তা পাঠানোর জন্যও তিনি প্রধানমন্ত্রকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিগত প্রায় সাড়ে ৭ বছর সময়ে তার সরকারের সাফল্য এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুল ধরে বলেন, সরকার এই সময়ের মধ্যে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ননীতির সাহায্যে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন সাধন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, প্রযুক্তি নির্ভর,শান্তিপূর্ণ ২১ শতকের আধুনিক দেশ হিসেবে গড়েই তোলাই তাঁর লক্ষ্য ।
তিনি ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সীমাহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই অশুভ শক্তির উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা। দেশের সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সরকার অচিরেই দেশের জনগণের সঙ্গে মিলে এই গুপ্তহত্যা বন্ধে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা খাতে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
একইসঙ্গে তিনি জনগণের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, তিনি বিরোধী দলে থাকাকালিনই দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা ভেবে রেখেছিলেন।
বাংলাদেশ এবং মিশরের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বলবৎ থাকার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই এই সম্পর্কের ভীত রচিত হয়।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মিশর সফরের কথাও স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে সরকারের প্রতি সহযোহিতার জন্য তাঁকে (মাহমুদ ইজ্জত) ধন্যবাদ জানান। তিনি ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমও উপস্থিত ছিলেন।

Tuesday, June 7, 2016

নস্টদের দখলে তিলে তিলে গড়ে তোলা কালকিনি উপজেলা আ'লীগ!

নস্টদের দখলে তিলে তিলে গড়ে তোলা কালকিনি উপজেলা আ'লীগ!

যেখানে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা করেছেন নৌকার বিরুদ্ধে যারা ইলেকশন করবে তারা যদি জিতেও যান তাদের কখনো আ'লীগে নেয়া হবে না। সেখানে কালকিনিতে ঘটতেছে সম্পুর্ন ব্যাতিক্রম। এখানে নৌকা ডুবানোরা হয় পুরস্কৃত। এখানে যারা নৌকায় ভোট দিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি হয় লুটপাট। মামলা হামলায় তারা হয় পলাতক। ক্ষমতার উচ্চ পদ থেকে নৌকার সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে অনবরত। আমার প্রানপ্রিয় আওয়ামী সমর্থকদের নামের মামলা তুলে নেয়া হয়নি। তাদের শতশত জালাও পোড়াও ও লুটপাট করা ঘরবাড়ি ঠিক করে দেয়া হয়নি। আমার ভাইদের বাড়িতে ফিড়িয়ে আনার উদ্যগ নেয়া হয়নি। এখনো প্রতিনিয়ত তাদের উপর চলছে নির্মম নির্যাতন। কাঁদছে আলীনগরবাসি, কান্নার আহাজারি চলছে লক্ষীপুরে, জলছে কয়ারিয়া। সাহেবরামপুর, সিডিখানসহ কি চলছে সারা কালকিনিতে একবার দেখে আসুন ছদ্দবেশে।

এই অবস্থার মধ্যই এমপি মহোদয় আ'লীগের শত্রু, নৌকার শত্রুদের সাথে নিয়ে সভা সমাবেশ ও মহরা দিয়ে চলেছেন। এতে করে কালকিনি উপজেলা আ'লীগের সকল সাধারন আরো লজ্জিত, ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের সকলের জিজ্ঞাসা আ'লীগ করাই আ্মাদের বড় অপরাধ হয়ে গেল? যারা আ'লীগের শত্রু তারা জুলুম করে আমাদের উপরে আর তারাই আবার এমপির সাথে থাকে তাহলে আমরা কোথায় যাব। দলের মধ্য থেকে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন করলো তাদের বহিস্কার করা হলো না কিন্তু যারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে তাদের বহিস্কার করা হলো।

ইউনিয়ন ইলেকশনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে চুপ, যারা উপজেলা আ'লীগের দায়িত্বে থেকেও নৌকা ডুবালো তাদের ব্যাপারেও এমপি সাহেব চুপ অথচো পৌরসভার সময় আমরা এমপি সাহেবের কি রুপ দেখেছিলাম। ইউপিতে যদি মনে করেন সবাই আ'লীগ তাহলে পৌরসভাতে কেন মাস্তানী করলেন? কি দোষ করেছিল কালাম ভাই, জীবন দিয়ে আ'লীগ করা লোকমানের কি অপরাধ ছিল, আ'লীগের জন্য জীবনের সবকিছু বিষর্যন দেয়া সবুজ কি পাপ করেছিল? আপনার এত মাস্তানির পরও এরা এক একজন কত ভোট পেয়েছিল একটু হিসেব করে নিয়েন! যদি মাস্তানি না করতেন তাহলে আপনার অবৈধ নৌকা কোথায় ভেষে যেত তার ঠিকানা খুজে পেতেন না।

উপজেলা ও পৌরসভা আ'লীগের সম্মিলিত মনোনয়ন বোর্ড এবং আ'লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলের সমর্থনে কালাম ভাইকে মনোনয়ন দিয়ে কেন্দ্রে রেজুলেশন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আপনি একা আপনার ক্ষমতা দিয়ে সবার মতামতকেই জলাঞ্জলি দিলেন। আপনার খামখেয়ালিপনার কারনে কালকিনি আ'লীগ ও তার অংগ সংগঠনের সবাই একযোগে পদত্যাগ করেছিল কিন্তু কাউকেই আপনি সামান্য তোয়াক্কা করলেন না। লোভ লালসা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেককেই বাগিয়ে নিলেন কিন্তু কতটা পেরেছেন, হিসেব মিলিয়ে দেইখেন। জুলুম, নির্যাতন ও মাস্তানির স্টীম রোলার চাপিয়ে দিলেন কালকিনির উপরে।

সম্পুর্ন অন্যায় ও নিয়মবহির্ভুতভাবে ইলেকশন চলাকালিন সময়েই বিদ্র্রোহীকে সমর্থন প্রদানের জন্য বহিস্কার করা হলো কিন্তু এখনতো অনেকদিন হয়ে গেল ইলেকশন শেষ। কই এখনতো তাদের বহিস্কার করছেন না বরং তাদের নিয়ে ঘুড়ছেন, খাইছেন, আনন্দ করছেন। এমন ডবল রোল আ'লীগের সাথে কেন? আ'লীগকে এত ভয় কেন? কেমন আজব চরিত্রের নেতা হলে এমনটা সম্ভব? বিএনপি জামায়ত দিয়ে যদি আ'লীগ করাতে চান তাহলে শরীর থেকে প্রথমে আ'লীগ নামটি মুছে ফেলুন।

শূন্য থেকে শুরু করে আজ কালকিনিতে সাজানো আ'লীগ। এই সাজানো বাগান ধংশ হতে দিতে পারিনা, দেব না। দলের জন্য অনেক রক্ত দিয়েছে আমার ভায়েরা। বিএনপিকে পাশে নিয়ে সেই ভাইদের রক্ত আবারো ঝরানো হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নেব না। কালকিনির জনগন এটা হতে দেবে না। কালকিনির জনগন প্রস্তুত থাকুন। কোনো রক্ত চক্ষুকে ভয় পাবেন না। আমাদের কালকিনি, আমাদের আ'লীগ, আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। জয় আমাদেরই হবে। 
জয় বাংলা

Monday, June 6, 2016

আমরা শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নেতা এবং একটি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ চাই

আমরা শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নেতা এবং একটি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ চাই